শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত সন্দেহের চোখে দেখছে ১৪ দল

যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত সন্দেহের চোখে দেখছে ১৪ দল

স্বদেশ ডেস্ক:

র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তা এবং সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনায় সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা। শরিক দলের অনেক নেতা যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের ইচ্ছা হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে চাইছে।

গতকাল সোমবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় জোট নেতাদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে আসে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশের সরকারকে অপছন্দ করে বা তার ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার পরিবর্তন করতে চায়, তখন তাদের ওপর বিভিন্ন দোষারোপ করে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে পিছিয়ে গেছে। বাইডেন কিন্তু ঘোষণাই দিয়েছেন, তিনি বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরতে চান। এ জন্য বিভিন্ন দেশকে তাদের বলয়ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ অঞ্চলেও তারা প্রভাববলয় সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। গণতন্ত্রের সম্মেলনে দাওয়াত না দিয়ে সেই ভূরাজনীতি কাজ করেছে।’

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যখন ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, তখন তারা এভাবে এগোয়। এভাবে বিভিন্ন সংকট সৃষ্টি করে সরকার পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়। আজ এটি কিন্তু সেসবের পূর্ব লক্ষণ। তারা সরকারকে পরিবর্তন করতে চায়। তবে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাবু করা যাবে না। উনি যে চ্যালেঞ্জ নেন, তা মোকবিলা করে সামনে এগিয়ে যান।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের ভেতরে যেসব রাজনৈতিক দল ও মহল হঠাৎ উচ্ছ্বসিত হয়ে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। বিদেশের কোনো রাষ্ট্র কী বলল, সেটি দেখে বাংলাদেশের ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ যারা করেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। অসাংবিধানিক পর্যায়ে সরকার গঠনের কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নেই।’ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না দেওয়া নিয়ে মনোপীড়ায় না ভোগার পরামর্শ দিয়ে ইনু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আলোচনায় দাওয়াত পেলাম কী পেলাম না, সেই মাপকাঠিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থান বিচার করা উচিত নয়। ভূরাজনীতির হিসাব-নিকাশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী বাংলাদেশ তার স্বকীয়তা থেকে সরে আসবে না এবং সব ধরনের জোটের বাইরে অবস্থান করেই তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। সুতরাং আমার কাছে মনে হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা ও গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না জানানোর ঘটনাটা তাদের ভূরাজনীতির হিসাব-নিকাশে করা হয়েছে, যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যাান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে টার্গেট করা হয়েছে, এটি মাথায় রাখতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে ‘অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অসম্মানজনক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার দরকার ছিল। আমেরিকার অ্যাম্বাসেডরকে ডেকে কৈফিয়ত চাইলাম, এটি কিছু না। যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তারা অন্যায় করেছে। তারা ব্যাখ্যা চাইতে পারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখতে পারত।’

জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আজ বঙ্গোপসাগর নিয়ে যে বলয় সৃষ্টি হয়েছে, সেই বলয়ে আমাদের দেশ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণেই চাপ প্রয়োগ হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এটি অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত। এটি তাদের জন্যই একটা অসম্মানজনক সিদ্ধান্ত বলে পরিগণিত হবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, সেই সময়ে আমেরিকার এ দুরভিসন্ধি অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। একাত্তরে যারা আমাদের বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি, সেই শক্তি শেখ হাসিনার উন্নয়নকে মেনে নিতে পারছে না।’ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস।

তিন মন্ত্রীকে দায়িত্ব

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কাজ করতে তিন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

বৈঠকে মার্কিন নিষেজ্ঞাধা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোনো আলোচনাই হয়নি। কারণ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বিষয়টি হ্যান্ডেল করছেন। তাই এটি নিয়ে আর আলোচনা হয়নি।’

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। এ বিষয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) তো ইতোমধ্যে এটি নিয়ে কথাও বলেছেন।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877